Home » প্রসঙ্গ ব্লাড ক্যান্সার [দ্বিতীয় পর্ব]
প্রসঙ্গ ব্লাড ক্যান্সার [দ্বিতীয় পর্ব]

প্রসঙ্গ ব্লাড ক্যান্সার [দ্বিতীয় পর্ব]

ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে সচরাচর পাওয়া যায় এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলাপ করা যাক। তারপর না হয় চিকিৎসা বিষয়ে আসব।

ব্লাড ক্যান্সার রোগের কি জীবাণু আছে?

না, ব্লাড ক্যান্সার রোগের জীবাণু বলতে কিছু নেই। এটা মূলত রক্তের অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিণত কোষ বিভাজন। অল্প কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি ভাইরাস এই অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। তবে ওরা সরাসরি জড়িত নয়। ভাইরাস মরে গেলেই রোগ ভালো হয়ে যাবে এমন নয়। বা ছোঁয়াচেও নয়।

সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় কি ব্লাড ক্যান্সার বুঝা যায়?

অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায়। যখন অনেক বেশি অপরিপক্ক শ্বেত রক্ত কণিকা (ব্লাস্ট সেল) রক্ত প্রবাহে চলে আসে তখন তো বুঝাই যায়। যত্ন নিয়ে দেখলে অল্প পরিমাণ ব্লাস্ট সেলও বুঝা যায়। তবে এগুলোর ধরন বুঝতে হলে বোনম্যারো বা ইমিউনোফেনোটাইপ পরীক্ষাই জরুরি।

অনেক সময় ব্লাস্ট সেলগুলো স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকের মাঝামাঝি একটা চেহারা ধারণ করে। তখন একটু ঝামেলা হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও ইমিউনোফেনোটাইপ খুব কাজে লাগে। অপরিপক্ক কোষ বা ব্লাস্ট সেলের গায়ে বিশেষ কিছু মার্কার থাকে। সেগুলো এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে।

রক্ত পরীক্ষায় কী পাওয়া যায়?

ব্লাস্ট সেল পাওয়া যায়। সংখ্যায় প্রচুর থাকে সাধারণত। অল্প স্বল্পও থাকতে পারে। দেখতে সাধারণ শ্বেত কণিকার চেয়ে একটু বড়ো সাইজের হয়। হিমোগ্লোবিন সচরাচর কম থাকে। প্লেইটলেটও কম থাকে। ডেঙ্গুর সাথে কোনো মিল আছে কি? প্লাটিলেট কম থাকে – এটুকু ছাড়া আর কোনো মিল নেই। এটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিলও নয়। ব্লাড ক্যান্সার মূলত ব্লাস্ট সেল বা অপরিণত শ্বেতকণিকা দেখে ডায়াগনসিস করা হয়। ফলে ডেঙ্গুর সাথে কনফিউজ করার কোনো সুযোগ নেই।

এসব পরীক্ষায় খরচ কেমন?

সরকারি হাসপাতালে বোনম্যারো পরীক্ষায় খরচ দুই হাজার টাকা। বেসরকারিতে ৫-৮ হাজার। ইমিউনোফেনোটাইপ পরীক্ষায় খরচ পড়ে সরকারি হাসপাতালে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা। বেসরকারিতে ১৫০০০-৩০০০০। ভারতের অনেক নামী প্যাথলজি সেন্টার বাংলাদেশে তাদের এজেন্সি খুলেছে। তাদের মাধ্যমেও পরীক্ষা করা যায়। বোনম্যারো বা রক্ত নিয়ে ভায়ালে ভরে তাদের দিলেই হয়। তবে আমার অভিজ্ঞতায় বলে পরীক্ষার মানের দিক থেকে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। দুই দিকেই মাঝে মাঝে কিছু ভুল রিপোর্ট আসে। মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু মার্কার দেখার প্রয়োজন হয় যেগুলো বাংলাদেশে হয় না। সেক্ষেত্রে ভারতের পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

বোনম্যারো সংগ্রহ করলে কি ব্যথা হয়?

কিছুটা হয়। তবে লোক্যাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েই করা যায়। লোক্যাল ইনজেকশন দিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে সুঁই ফোটালে ব্যথা তেমন হয় না বললেই চলে। তারপরও কেউ কেউ আছেন যারা অল্পতেই কাতর থাকেন। তাদের একটু আদর-স্নেহ-সাহস দিয়ে করতে হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া, কেটামিন দেওয়া, অজ্ঞান করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। অল্প ব্যথার জন্য অধিক ঝুঁকি নেওয়া গাধামির শামিল।

সাইটোজেনেটিক্স পরীক্ষা কী?

ওই যে বলেছিলাম আগের পর্বে যে কিছু জিনের মিউটেশন, ডিলেশন, ক্রোমোজোমের বাহুতে ওলট-পালট হয়ে এই রোগ হয়! সাইটোজেনেটিক্স করে সেই ওলট-পালট গুলো দেখা হয়। কত নম্বর জিনে সমস্যা হলো, কত নম্বর ক্রোমোজমে সমস্যা হলো ইত্যাদি বুঝা যায়। এদের নাম্বার দিয়ে চেনা হয়। কারও কারও বিশেষ নামও আছে। এগুলো দেখে আন্দাজ করা যায়- রোগটি কতটা ভয়াবহ, ভালো হবার সম্ভাবনা কত পার্সেন্ট, কেমোথেরাপিতে কাজ হবে নাকি বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে; ইত্যাদি।

প্রথম পর্ব পড়ুন: প্রসঙ্গ ব্লাড ক্যান্সার [প্রথম পর্ব]

লিখেছেন: Gulzar Hossain Ujjal 

Medical Officer at National Cancer Research Institute

আরও পড়ুন: শল্য চিকিৎসার ইতিহাস

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: