ব্লাড ক্যান্সার ও তার চিকিৎসা নিয়ে অনেকের অনেক রকম জিজ্ঞাসা থাকে। অনেক ভুল ধারণা, মিথ ও গুজবও থাকে। এই লেখাটি ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে। সব শ্রেণির মানুষের জন্য।
ব্লাড ক্যান্সার কী?
মূলত লিউকেমিয়াকেই আমরা সাধারণভাবে ব্লাড ক্যান্সার বলে থাকি। ব্লাড ক্যান্সার হলো রক্ত কোষের ক্যান্সার। বিশেষ করে শ্বেত রক্ত কণিকার। রক্ত কোষ তৈরি হয় বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জায়। তৈরির পর কয়েকটি ধাপে কোষগুলি ম্যাচিউর হয়ে তারপর রক্ত প্রবাহে আসে। কোনো কারণে এই কোষগুলি অতিমাত্রায় উৎপাদিত হলে এবং ঠিকভাবে ম্যচিউর না হলে দেখা যায় রক্ত প্রবাহে প্রচুর অপরিপক্ক রক্ত কোষ এসে ঘুর ঘুর করছে। এরা শরীরের কোনো কাজে তো আসেই না উল্টো নানারকম উপসর্গ তৈরি করে। শ্বেত রক্তকণিকাগুলিই বেশি আক্রান্ত হয়।
কেন হয়?
কারণ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দীর্ঘদিন দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন খেলে পরে ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। কেমিক্যাল বর্জ্য, রংয়ের কারখানা, ধূমপান, কীটনাশক ইত্যাদিও কারণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ এক ধরনের ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। এসবের প্রভাবে শরীরের কোষাভ্যন্তরে যে জিন থাকে সেগুলোর মিউটেশন হয়, ক্রোমোজমের বাহুগুলিতে কিছু ওলট-পালট হয়। তখন কোষ বিভাজনে কিছু উল্টা-পাল্টা সিগন্যাল যায়। ফলশ্রুতিতে রক্ত কোষ ব্যাপক হারে উৎপাদিত হয় এবং সেগুলো পরিণত না হয়েই রক্ত প্রবাহে চলে আসে। ওপরের কারণ গুলো ছাড়াও বা জ্ঞাত কোনো ছাড়াই ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে?
একদমই না। এটা রক্তবাহিত, যৌনবাহিত, পানিবাহিত এমন কিছুই না। রোগীর সাথে থাকলে, তাকে ছুঁলে, এঁটো খাবার খেলে, তার রক্ত গায়ে লাগলে, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে এই রোগ ছড়াবে না।
লক্ষণ কী? কী হলে বুঝব?
জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে র্যাশ, হাড়ে ব্যথা, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত যাওয়া এইসব লক্ষণগুলি একসাথে দেখা দিলে সাবধান হয়ে যাবেন। সন্দেহ করতে পারেন যে আপনার ক্যান্সার হয়েছে।
কনফার্ম করব কী করে?
রক্তের ফিল্ম বা PBF পরীক্ষা করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ বুঝা যায়। তবে নিশ্চিত হতে হলে বোনম্যারো পরীক্ষা করতে হবে। ফ্লো সাইটোমেট্রি বা ইমিউনোফেনোটাইপ সরকারি হাসপাতালে করা যায়। এগুলো হলো নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা। সাইটোজেনেটিক্স করা হয় রিস্ক এসেস্মেন্টের জন্য। ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। রোগীর ভালো হবার সম্ভাবনা কদ্দুর, কী চিকিৎসা তার জন্য ভালো হবে এইসব।
চলবে…
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন: প্রসঙ্গ ব্লাড ক্যান্সার [দ্বিতীয় পর্ব]
লিখেছেন: Gulzar Hossain Ujjal
Medical Officer at National Cancer Research Institute
আরও পড়ুন: শল্য চিকিৎসার ইতিহাস