সম্প্রতি চীনা স্মার্টফোন হুয়াওয়ের ওপর অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের কিছু আপডেট করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গুগল। এর ফলে হুয়াওয়ে স্মার্টফোন এর নতুন কয়েকটি মডেল থেকে কিছু গুগল অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না। এতে বাংলাদেশেরসহ সকল দেশের সোস্যাল মিডিয়ায় তুমুল গুঞ্জন চলছে। ফোনটা এবার অকেজো হয়ে গেল।
মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুয়াওয়েকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন একটি তালিকায় রাখা হয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো আমেরিকান কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। ওই তালিকায় হুয়াওয়েকে অন্তর্ভূক্ত করার পর গুগলের এই সিদ্ধান্ত এলো।
হুয়াওয়ের ফোন এখন বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষের হাতে। তাহলে এই ৫০ কোটি মোবাইল কি অকেজো হয়ে যাবে?
হুয়াওয়ে স্মার্টফোন এ কী ঘটেছে আসলে?
চীনা মোবাইল ফোন নির্মাতা সংস্থা হুয়াওয়ের ওপর অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের কিছু আপডেট করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গুগল।
এর ফলে হুয়াওয়ে স্মার্টফোন ইউজাররা কী রকম সমস্যায় পড়তে পারে?
স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে যে অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাতে থাকে একাধিক সফটওয়্যার। হুয়াওয়ের স্মার্টফোন গুলোও এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এই সফটওয়্যারগুলো থাকে পরতের মতো। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত এই পরতগুলো এমন : ইউজার ইন্টারফেস, গুগল সার্ভিসেস (গুগল প্লে, জিমেইল, ইউটিউব ইত্যাদি), অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং ফোনের হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেম সফটওয়্যার।
এই সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে হুয়াওয়েকে ‘গুগল সার্ভিস সেবা’ দেওয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে গুগল। যার ফলে সরাসরি অ্যান্ড্রয়েডের সফটওয়্যার আপডেট পাবে না হুয়াওয়ে স্মার্টফোন ।
তার মানে কি হুয়াওয়ে আর অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে না?
পারবে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের পর্দার আড়ালের ভিত্তিটির নাম ‘অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট’ বা ‘এওএসপি’। এটি ‘ওপেন সোর্স’ মানে যে কেউই এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে। এই ‘এওএসপি’ আবার নির্মিত হয়েছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণের ওপর ভিত্তি করে। তাই গুগল তাদের সংস্করণটি হালনাগাদ (আপডেট) করলে অন্যদেরও এটি পাওয়ার সুযোগ থাকছে।
তাই গুগল-হুয়াওয়ে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় যতক্ষণ পর্যন্ত না হুয়াওয়ে ‘এওএসপি’ থেকে অ্যান্ড্রয়েডের হালনাগাদ সংস্করণ বের করছে, গুগল থেকে সরাসরি নিজেদের স্মার্টফোনে কোনো আপডেট পাবেন না হুয়াওয়ের গ্রাহকরা। অবশ্য হুয়াওয়ে কিন্তু তার নিজের দেশে, অর্থাৎ চীনে তার গ্রাহকদের ফোনের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ নিজেরাই হালনাগাদ করে দিয়ে আসছে। কারণ, চীনে গুগলের বেশিরভাগ সেবাই বন্ধ।
এ ছাড়া হুয়াওয়ে-গুগল বিচ্ছেদের আরও একটি অর্থ হলো, গুগল প্লে সার্ভিসের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েডে এখন থেকে যত ধরনের নতুন ফিচার আনবে, সেগুলোর কোনোটিই পাবে না ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রি হওয়া হুয়াওয়ের স্মার্টফোন গুলো।
তাহলে কি হুয়াওয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে?
না। এ মুহূর্তে আপনার হাতে থাকা হুয়াওয়ে স্মার্টফোনটি আগের মতোই চলবে। কারণ, হুয়াওয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের বিক্রি হওয়া সব স্মার্টফোনেই নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট ও বিক্রয়োত্তর সব সেবাই অব্যাহত থাকবে।
হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে কি গুগল সার্ভিস কাজ করবে?
হ্যাঁ করবে। এ মুহূর্তে বাজারে থাকা সব হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে গুগল, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও অন্যান্য গুগল অ্যাপস আগের মতোই কাজ করবে। তবে হুয়াওয়ে এ মুহূর্তে নতুন কোনো ফোন বাজারে আনলে সেগুলোতে এসব ফিচার কাজ করবে না।
হুয়াওয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা কি আর কোনো ধরনের আপডেট পাবেন না?
পাবেন। গুগল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমানে যেসব ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোতে গুগল প্লের সব আপডেটই নিয়মিত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রতি মাসের সিকিউরিটি আপডেটও ‘এওএসপি’র মাধ্যমে দিতে পারবে হুয়াওয়ে।
সূত্র:
আরও পড়ুন: ব্লগিং করে আয় করা কি আসলেই সম্ভব?