হ্যালুসিনেশন আর ইলিউশন এর পার্থক্য
হ্যালুসিনেশন আর ইলিউশন এই দুটোর পার্থক্য খুব একটা নেই। দুটোই বিভ্রান্তি। প্রথমে জেনে নিতে হবে হ্যালুসিনেশন কী?
এ ক্ষেত্রে আমাদের ইন্দ্রিয় নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরি। ইন্দ্রিয় মোট পাঁচটি তবে বর্তমানে ছয়টির কথাও শোনা যায়। আমরা ধরে নিলাম পাঁচটি। এক এক ইন্দ্রিয়ের কাজ এক এক রকম। কানে কোনো আওয়াজ আমরা তখনই শুনতে পাই যখন কোনো আওয়াজ হয়। মাঝে মাঝে এমনও মনে হয় মা ডাকছে। মা এর কাছে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, না ডাকিনি। তাহলে কী দাঁড়ালো? উদ্দীপনা ব্যতিরেকে ব্যক্তি কোনো বিশেষ ইন্দ্রিয়ানুভূতি লাভ করে। এটা এমন নয় যে খুব আস্তে বা খুব জোরে শোনা যায়। আশপাশের লোকজনের কথা সে যেমনভাবে শুনতে পায়, কানের গায়েবি কথাও ঠিক তেমনভাবে ঘটে থাকে।
ঠিক তেমনি ভাবে দেহের প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয় হ্যালুসিনেশন এর পর্যায়ে পড়তে পারে। চক্ষু , কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক। চোখের হ্যালুসিনেশন ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন। রোগী চোখের সামনে কোনো বস্তু দেখতে পায়। এতেও আবার আকারের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কোনো বস্তুকে তার স্বাভাবিক আকারের চেয়েও ছোটো অবয়বে দেখতে পারে। আবার অনেক বেশি বিবর্তিত আকারেও দেখতে পারে। রোগী এ ক্ষেত্রে তার সামনে দৈত্যের কথা বলতে পারে।
ত্বকের হ্যালুসিনেশন রোগী বলতে পারে তার ত্বকের ওপর দিয়ে বা নিচ দিয়ে শুয়ো পোকা চলাচল করছে। অপর একদল বলে থাকে কেউ যেন প্রতিদিন তার সঙ্গে সঙ্গম করে যাচ্ছে। তার শরীরের মাঝে কেউ যেন ইলেকট্রিক শক দিচ্ছে। এগুলো ত্বকের হ্যালুসিনেশন।
জিহ্বা আর নাসিকার হ্যালুসিনেশন, মনোরোগ গবেষকরা এ দুটোকে এক সাথে উল্লেখ করে থাকেন। কারণ এ দুটো নাকি এক সাথে ঘটে থাকে। জিহ্বার হ্যালুসিনেশনে রোগী কোনো এক অজানা জায়গা হতে খাবারের স্বাদ পেয়ে থাকে। নাসিকার হ্যালুসিনেশনে আশপাশের কেউ কোনো গন্ধ শুঁকছে না অথচ রোগী প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে তার নাকে যেন কোথা হতে এক উৎকট গন্ধ আসছে।
এতক্ষণ বললাম হ্যালুসিনেশন এর কথা। তাহলে ইলিউশন কী?

ইলিউশন এর ক্ষেত্রে যেকোনো একটা উদ্দীপক থাকবে। মানে হচ্ছে হ্যালুসিনেশন ক্ষেত্রে মানুষ ফাকা জায়গায় ভূত দেখবে আর ইলিউশন এর ক্ষেত্রে কোনো ছায়া বা গাছ দেখে ভূত ভাববে। ঠিক তেমনি পাতার শব্দ শুনে ভাববে পিছে কেউ আসছে। বেশির ভাগ সুস্থ্য মানুষ ইলিউশন এর স্বীকার হয়। ফাঁকা স্থানে সন্ধ্যার পর যে কেউ ইলিউশন এর স্বীকার হতে পারে। ইলিউশন রোগের মধ্যে পড়ে না কারণ এটা সুস্থ্য মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে হ্যালুসিনেশনকে রোগ হিসেবে বিবেচন করা যায়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে সরাসরি তুমি সম্বোধন করে হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। যেমন তুই শব্দ, তুই এটা কর, তোর সব শেষ। এ ধরনের শোনার হ্যালুসিনেশনের নাম সেকেন্ড পারসন হ্যালুসিনেশন।
কতক ক্ষেত্রে কানে দুই বা ততধিক লোক রোগীকে নিয়ে আলাপ-আলোচনায় মেতে ওঠে। রোগীর অবস্থান অনেকটা থার্ড পারসনের মতো। যেমন- করিম ভালো ছেলে, করিমকে দিয়ে কিছু হবে না ইত্যাদি। এর নাম থার্ড পারসন হ্যালুসিনেশন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশনের ধরন আরও মজার। রোগী মনে মনে যা চিন্তা করে সেটিই সে শুনতে পায়। কেউ যেন তার মনের মাঝের চিন্তাগুলোকে শুনিয়ে যাচ্ছে। চিন্তাগুলো কথার মাধ্যমে শোনার মাঝেও নানা রকমফের বিদ্যমান। কেউ কেউ মনে চিন্তা আসার আগেই কানে শুনতে পায়, সেটিই পরক্ষণে চিন্তনে রূপ নেয়। অপর দল চিন্তায় সমসাময়িক শব্দ বাক্যে শুনতে পায়। তৃতীয়পক্ষের বেলাতে প্রথমে চিন্তা মনে আসে। অতঃপর মনের সে সব চিন্তা কেউ যেন সশব্দে উচ্চারণ করে শুনিয়ে দেয়। যেন চিন্তাগুলো মনের মাঝে প্রতিধ্বনিত হতে পারে।
এক ধরনের শ্রবণ হ্যালুসিনেশন গায়েবি আওয়াজের অবস্থান সার্বক্ষণিক। ক্রিকেটের ধারাবিবরণী প্রকাশের মতো করে ব্যক্তি যেন রোগীর কার্যকলাপ বলেই যেতে থাকে। যেমন- করিম ভাত খাচ্ছে, ভাতের সাথে সামান্য তরকারি নিলো, তার তরকারি ভালো লাগছে না…। এ ধরনের হ্যালুসিনেশনের নাম রানিং কমেন্টারি।
ঠিক এমনটি ঘটতে পারে শ্রবণ ক্ষমতার বেলাতেও। আমাদের শোনার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। বাংলাদেশে বসে আমেরিকায় কোনো আত্মীয় কথা বলছে তা শোনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মানসিক রোগে এ অসম্ভব সম্ভব হয়ে যায় মনের মাঝের কোনো এক অজানা প্রক্রিয়ায়। রোগী তার কাছ হতে হাজার মাইল দূরে থাকা কারও কথা শুনতে পায়। এর নাম এক্সট্রা ক্যাম্পেইন অডিটরি হ্যালুসিনেশন।
সূত্র: সাইকো বিডি
আরও পড়ুন: অবহেলিত নারী বিজ্ঞানী লিসে মাইটনার!