Home » ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা কেন?
ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা কেন?

ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা কেন?

ডাক্তারেরা সাধারণত ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন না । তার মানে এখানে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই।ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক কাজ করেনা,  কিন্তু তা তো হওয়ার কথা ছিল না কারণ, এন্টিবায়োটিক বলতে বোঝায় জীবনের বিরুদ্ধে (anti মানে অন্তরায়, bios মানে জীবন)। কাজেই এই হিসাব করলে, এন্টিবায়োটিক সব জীবনের বিরুদ্ধেই কাজ করার কথা।

যখন প্রথম এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয় তখন এটাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় , এটি এমন একটি অণুজীব বিরোধী রাসায়নিক পদার্থ, যা কোনো অণুজীব দ্বারা নিঃসৃত হয়; এবং অন্য কোনো অণুজীবের বিস্তৃতি রোধ করতে পারে। এই সংজ্ঞা অনুসারে, রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত সালফা ড্রাগগুলো এন্টিবায়োটিক নয়, যদিও তারা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল। বর্তমানে, এন্টিবায়োটিক বলতে বুঝি সকল রাসায়নিক পদার্থ (প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত) যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, মানে মেরে ফেলে কিংবা বিস্তৃতি রোধ করে।

অর্থাৎ, এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না, এমনই তার সংজ্ঞা। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেসব ওষুধ কাজ করবে, তাদের আমরা বলি “এন্টি-ভাইরাল” ওষুধ।

এরপরও প্রশ্ন আসতে পারে, কেনো এই এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার শত্রু, কিন্তু ভাইরাসের না? তারও উত্তর আছে।

গঠনগত দিক থেকে ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া, ভাইরাস এবং ইউক্যারিওটিক জীবকোষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। কোনো অণুজীবের সংক্রমণ রোধ করতে হলে এমন অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ওই অণুজীব মরবে, কিন্তু তার পোষকের কোষ (মানে অসুস্থ জীবকোষ) মরবে না। মানে প্রতিটি অস্ত্র নির্দিষ্ট ধরনের অণুজীবের জন্য নির্দিষ্ট। ১৯০০ সালে এই অস্ত্রের নাম দেয়া হয়েছিলো “জাদুর বুলেট”।

পেনিসিলিনের কথাই ধরা যাক। পেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ধ্বংস করে। কিন্তু আমাদের কোষের প্লাজমা জালিকা নষ্ট করে না, গাছেরও কোষপ্রাচীর নষ্ট করতে পারে না (ছত্রাকেরও না, প্রকৃতিতে এই ওষুধ আবিষ্কার করেছে ছত্রাক)। ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর গঠন করে পেপটাইডোগ্লাইক্যান নামের পলিমার। এই পেপটাইডোগ্লাইক্যান অণু যেন গঠিত হয়ে পরস্পরের সাথে “ক্রস-লিংক” নামক বিশেষ সংযোগ না করতে পারে, সেজন্য একটি উৎসেচকের ক্রিয়াকে নষ্ট করে ওষুধটি। যে প্রোটিন অণুর সাথে পেনিসিলিন গিয়ে লাগে তার নাম আমরা দিয়েছি: “পেনিসিলিন-বাইন্ডিং-প্রোটিন” (সংক্ষেপে পিবিপি)।

ইউক্যারিওটিক জীবে পিবিপি নেই, পেপটাইডোগ্লাইকেন অতোটা জরুরি নয়, প্রাণীদের কোষপ্রাচীরই নেই। তাই পেনিসিলিন শুধু ব্যাকটেরিয়ার শত্রু।

এতকিছু বলছি কেনো উত্তরে! ভাইরাসের তো কোনো কোষই নেই! ভাইরাস হলো এমন কিছু যা অন্য কোষের বিভাজন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজে বংশবৃদ্ধি করে। অন্য কোষকে না পেলে সে জড়বস্তুর মতো। এটি এমনই অদ্ভুত কিছু, একে ধ্বংস করার জন্য আমাদের কোষীয় জীব মারার পদ্ধতিগুলো খাটবে না। তাই, ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক ক্রিয়াশীল নয়।

ভাইরাস জ্বর বুঝবেন কীভাবে?

ভাইরাস জ্বরের প্রথম কাজ হচ্ছে হুট করে জ্বর অনেক বেশি থাকবে। খুব সহজে জ্বর কমতে চাইবেনা। অনেক অসুস্থ্য হয়ে যাবে দ্রুত । শরীর দুর্বল, মাথা ব্যথা থাকতে পারে। বিভিন্ন ভাইরাস এর কারণে জ্বর হতে পারে । বিশেষ করে ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ নানা কারণে ভাইরাস জ্বর হতে পারে।

ভাইরাস আক্রমণের ২ থেকে ৭দিন পর জ্বর হয়। শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীর ও গিরায় ব্যথা, অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেকের পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংক্রমণে পেটব্যথাও হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অনবরত চরিত্র বদলায়, তাই উল্লিখিত লক্ষণগুলোর প্রতিটি সব রোগীর মধ্যে না-ও থাকতে পারে। আবার একেক রোগীর ক্ষেত্রে ভাইরাসটির তীব্রতাও একেক রকম হতে পারে। কারও হয়তো তিন দিনেই জ্বর ভালো হয়ে গেল, কারও আবার ৭ থেকে ১৪ দিনও লাগতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হয়। তাই এ সময় সতর্ক থাকাই উচিত।এবং শেষ কথা এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত নয় ।

আরও পড়ুনঃ ব্যাকটেরিয়া চাষ

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: