Home » স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে ?
স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান

স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে ?

বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্বপ্ন একটা স্বাভাবিক বিষয়। কেউ কেউ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে । কারো আবার মনেই থাকেনা কি স্বপ্ন দেখেছে। আমাদের কাছে স্বপ্ন এতো ছোট বিষয় হলেও বিজ্ঞান এটা নিয়ে গবেষণা করে চলেছে । এটার একটা টার্মও রয়েছে । ‘অনেইরোলোজি’ (Oneirology) নামে একটি শাখা রয়েছে স্বপ্ন নিয়ে গবেষণার জন্য ।

বাংলাদেশের মানুষ এখনও মনে করে মৃত মানুষ তাদের স্বপ্ন দেখায় । স্বপ্নে দেখা করতে আসে । সে ভালো আছে কিনা মন্দ আছে এটা জানাতে আসে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন গোষ্ঠী স্বপ্ন ঈশ্বরের বার্তা বলেই মনে করতো। আরবি এবং গ্রিক সংস্কৃতির স্বপ্ন ব্যাখাকে অনেক প্রভাবিত করে। মিসরীয়রাও সুমেরীয়দের মতো স্বপ্নকে ঈশ্বরের নিদর্শন মনে করত। তারা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন, এমনকি বলিদানও করত, যাতে ঈশ্বরের তাদের কাছে ভবিষ্যৎ উন্মোচন করেন। ফারাওদের স্বপ্নগুলোকে তারা সরাসরি ঈশ্বরের আদেশ-নিষেধ হিসেবে গ্রহণ করত।

অনেক ভাবে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করেছেন আসলে মানুষ কীভাবে স্বপ্ন দেখে এবং সেটা নিয়ে নানা মতামত প্রচলিত আছে। সর্বাধিক পুরান মতবাদ হিসাবে প্রচলিত আছে সিগমুণ্ড ফ্রয়েড এর মতবাদ। তিনি বলেন, মানুষ সেইগুলোই স্বপ্নে দেখে যেগুলো তার অবচেতন মনে থাকে এবং এতে বাস্তবে প্রকাশ করা যায় না বা প্রকাশ করলে পারিপার্শ্বিকতার সাথে মিলে না। কাজেই স্বপ্নের মধ্যে সেই অংশটুকু বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করা হয়। এই মতবাদের অনেক বৈজ্ঞানিক সমালোচনা বিদ্যমান।

আরেকদল বিজ্ঞানীর মতবাদ পাওয়া যায় যে, মানুষ তার মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ফলশ্রুতিতে স্বপ্ন দেখে। মানুষ তার ঘুমের যে অংশে স্বপ্ন দেখে ওই অংশে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বেশ বেড়ে যায়। এই বেড়ে যাওয়া কার্জকালাপের জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই মতবাদেরও বৈজ্ঞানিক সমালোচনা বিদ্যমান। আরও অনেকে এই মতবাদের ওপর কাজ করার চেষ্টা করেছেন।

আধুনিক বিজ্ঞান কি বলে?

মানুষের ঘুমের বিভিন্ন স্তর রয়েছে; যার মধ্যে একটি হলো ‘রেম স্লিপ’ (REM Sleep)পর্যায়। বেশির ভাগ স্বপ্ন আমরা এই স্তরেই দেখি। ঘুমের এই স্তরে মস্তিষ্কের কিছু অংশ আমরা জেগে থাকলে যেমন সজাগ থাকে, তেমনটাই সজাগ থাকে। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে এই REM পর্যায়টি ৫-১০ মিনিট থেকে ৩০-৩৪ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তো স্বপ্নে আমরা যা দেখি, তা কী-ইবা দেখি, কেনইবা দেখি? আধুনিক ইমেজিং টেকনিক, যেমন- PET Scan, MRI প্রভৃতির কল্যাণে মনোবিশেষজ্ঞ এবং স্নায়ু-বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, স্বপ্ন হলো মস্তিষ্কের অতিরিক্ত তথ্য মুছে দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর ভিত্তি আরো মজবুত করার একটি কৌশল।

ঘুমের মধ্যে যখন আমাদের চোখের অক্ষিগোলক খুব দ্রুত সঞ্চালিত হয় তখন তাকে কম্পাক্ষি নিদ্রা বলে।আর বিজ্ঞানিরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের চোখের অক্ষিগোলক খুব দ্রুত সঞ্চালিত হয়।তার মানে আমরা সবসময় কম্পাক্ষি নিদ্রার মধ্যে স্বপ্ন দেখে থাকি।স্থিরাক্ষি নিদ্রাটা শুরু হয় ঘুমের প্রথম থেকেই,চলে প্রথম ৮০ মিনিট পর্যন্ত।এরপর ২০ মিনিট ধরে চলে কম্পাক্ষি নিদ্রা।আর তারপর আবার শুরু হয় স্থিরাক্ষি নিদ্রা।এইভাবে ৪ থেকে ৬ টা পর্বে শেষ হয় আমাদের রাতের ঘুম।মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী প্রানিদের ক্ষেত্রেই  কম্পাক্ষি নিদ্রা আর স্থিরাক্ষি নিদ্রা পর্যায়ক্রমে আসে।আর আমরা স্বপ্নটা দেখি তখনি যখন আমাদের অক্ষিগোলকটা খুব দ্রুত সঞ্চালিত হতে থাকে।আর এই দশাটা হয় ঘুমটা যখন খুব হালকা হয়।তার মানে আমরা ঘুম ভাঙ্গার প্রায় ২০ মিনিট আগপর্যন্ত যে হালকা ঘুম ঘুমাই ঠিক তখনই আমরা যাবতীয় স্বপ্ন দেখে থাকি।

স্বপ্নের আবার বিভিন্ন ভাগ-বিভাজন রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং মজাদার একটি অংশ হলো লুসিড ড্রিমিং (Lucid Dreaming)। এটি এমন একটি পর্যায়, যখন যে ব্যক্তি স্বপ্ন দেখছে, সে বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নের বিষয়বস্তু এমনকি চরিত্রের ক্ষেত্রেও ব্যক্তির তখন কিছু মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ থাকে! এই লুসিড ড্রিমিং বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত এবং যারা লুসিড ড্রিমিং করতে পারে তাদেরকে অনেক সময় অনেইরোনাট (Oneironaut) বলা হয়। স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান এর গবেষণা এখনও চলছে । হয়তো আরো অনেক কিছু এক সময় বের হয়ে আসবে ।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কি কোন ক্ষতি করে ?

 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: