সুপারনোভার নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য। কিন্তু সুপারনোভা আসলে কী? একটি নক্ষত্র তার জীবনচক্রের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে এতে যে বিস্ফোরণ ঘটে সহজ ভাষায় তাই-ই সুপারনোভা । সম্প্রতি এমনই ১৮০০ সুপারনোভার চিত্র ধরা পড়েছে জাপানের সুবারু টেলিস্কোপে। এই ১৮০০ সুপারনোভায় মিলিয়ে প্রায় ৫৮টি ছিল এলএ টাইপ সুপারনোভা (সুপার লুমিনাস সুপারনোভা)। সুপারনোভাগুলো পৃথিবী থেকে ৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে সংঘটিত হলেও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সুবারু টেলিস্কোপে সহজেই মিলেছে এর স্পষ্ট ছবি।
সুপারনোভার সময়ে প্রায়ই নক্ষত্রগুলো এর মূল নক্ষত্রের চেয়েও বেশি আলো এবং শক্তি বিকিরণ ঘটাতে সক্ষম, যা আমাদের চেনা নক্ষত্র সূর্যের চেয়েও ১ বিলিয়ন বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গবেষকরা নতুন ধরনের এলএ টাইপ সুপারনোভার প্রতি তাদের আগ্রহের মাত্রা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন। এলএ টাইপ সুপারনোভা সাধারণ যেকোনো সুপারনোভার তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি উজ্জ্বল বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাদের এই অতি উজ্জ্বল বিকিরণ দূরবর্তী আরও অনেক নক্ষত্রের ব্যাপারে নিজেদের ধারণার বিকাশে ব্যবহার করে চলেছেন মহাকাশ গবেষকরা।

কিন্তু সুপারনোভার মতো ঘটনা একেবারেই দূর্লভ এবং বর্তমান বিশ্বে খুব কম সংখ্যক টেলিস্কোপই এটি নিজের ক্যামেরায় ধারণ করতে সক্ষম। সুপারনোভাকে ক্যামেরাবন্দী করতে জাপানের ‘কাভলি ইন্সটিটিউট ফর ফিজিক্স এন্ড ম্যাথমেটিক্স অফ দ্য ইউনিভার্স’ প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর নাওকি ইউসুদার নেতৃত্বে সুবারু টেলিস্কোপ নির্মানে এগিয়ে আসে টোহাকু ইউনিভার্সিটি, কোনান ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল অবজারভেটরি অফ জাপান এর মতো সব প্রতিষ্ঠান।
সুবারু টেলিস্কোপের ৮৭০ মেগাপিক্সেলের সুপার ক্যামেরার কল্যাণে রাতের আকাশে স্বাভাবিক যেকোনো টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক বড় জায়গার ছবি একেবারেই নিঁখুত এবং স্থির অবস্থায় ধারণ করা সম্ভব। হাবল টেলিস্কোপের ৫০ টি সুপারনোভার ছবি নিতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগলেও সুবারু টেলিস্কোপ একবারেই ৫ টি সুপার লুমিনাস সহ ৪০০ টি সুপারনোভার ছবি নিয়ে রীতিমত আলোড়ন তুলেছে সারাবিশ্বে।
গবেষণা দলের প্রধান নাওকি ইয়াসুদার মতে, সুবারু টেলিস্কোপ ইতিমধ্যেই মহাকাশে কৃষ্ণবস্তুর একটি থ্রি ডি চিত্র তৈরির কাজে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। একইসাথে এর মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল নিয়েও ব্যাপক গবেষণা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই অধ্যাপক। ইয়াসুদা আশা প্রকাশ করেন নতুন ধারণ করা এইসব সুপারনোভার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ এবং কৃষ্ণ শক্তির ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত জানা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে। গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে জাপানের ‘পাবলিকেশন্স অফ দ্য অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল সোসাইটি অফ জাপান’ এর মাসিক সংখ্যায়।
আরও পড়ুন: ব্ল্যাক হোল রহস্য!