বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে অত্যাধিক ধর্মীয় ভাবে সংশ্লিষ্ট মানুষ বিবর্তন বিশ্বাস করেনা, যদিও তারা অনেকেই শিক্ষিত সমাজের মধ্যেই পড়ে। বায়োলোজি নিয়ে পড়েছে, এমনকি অনেক ডাক্তার, জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ার বিবর্তন বিশ্বাস করেনা। তারা পড়ালেখা করেছে শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য। যদিও বিবর্তন শুধু ডারউইন এর উপরই নির্ভর করেনা তবুও তার নামটাই যেহেতু সবাই জানে তার কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নিয়েই কথা বলা যাক।
ধর্মীয় কিছু লোক বিবর্তন বলতে একটা বাক্য বোঝেন , ” বানর থেকে মানুষ হয়েছে” আর এ কথাটা ভুল প্রমাণ হয়ে গেছে তার মানে বিবর্তনবাদ মিথ্যা বা ভুল কিছু। আমাদের ভাগ্য খুবই খারাপ যে আমাদের দেশে ধর্ম মানা এসব লোক কোন ধরণের পড়াশোনা করেনা । বরং ধর্মের পক্ষে কেউ মিথ্যা খবর শোনালে সেটাকেই বিশ্বাস করে নেয়। যা দিনে দিনে আমাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলছে। কোনদিনই আলোর পথে নিচ্ছেনা। কারণ কোন বিজ্ঞানি একটা কথা বলতে তার পেছনে বছরের পর বছর গবেষণা করেন আর আমরা দুম করে সেটাকে বিচার করে ফেলি।
সরীসৃপ থেকে পাখির বিবর্তনের অনুমান
বিবর্তন তত্ত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য হচ্ছে পাখিরা সরীসৃপ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। ডারউইন মনে করতেন যে আধুনিক পাখির ডানার হাড় দেখতে মনে সরীসৃপের হাতের মত, আর এগুলো যেন কোনোভাবে একীভূত হয়েছে। ডারউইন বলেন যে এমন একটা প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া যাবে যার হাতের হাড়ে সরীসৃপদের মত আঙ্গুলও থাকবে, পাখির মত পালক থাকবে কিন্তু তার ঠোঁটে বা মুখে সরীসৃপের মত দাঁতও পাওয়া যাবে। সে সময় এটা নিয়ে প্রচুর বিদ্রুপ এবং সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরে যখন পালকওয়ালা ডায়নোসর গোত্রীয় প্রাণী Archaeopteryx lithographica এর জীবাশ্ম পাওয়া গেলো তখন দেখা গেলো হাতে আঙ্গুলের হাড় আর পালকের পাশাপাশি এর মুখে সরীসৃপের মত দাঁতও আছে। এবং শুধু একটি lithographica জীবাশ্ম নয়, কয়েকটি জীবাশ্ম দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আসলেই এদের ধারালো দাঁত ছিল, এবং পালকও ছিল।
ক্যাম্ব্রিয়ান জীবাশ্ম
ডারউইন ভূতত্ত্ববিদ্যাও পড়েছিলেন। তিনি ভূতাত্ত্বিক সময় আর স্তর সম্পর্কে জানতেন। ডারউইনের সময়ে ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের আগের কোনো জীবাশ্ম পাওয়া যায় নি। আর ডারউইন এটাকে তাঁর তত্ত্বের বিরুদ্ধে “valid argument” বলে মেনে নিয়েছিলেন। শেষমেষ ১৯৫৩ সালে প্রাক ক্যাম্ব্রিয়ান জীবাশ্ম পাওয়া গেলো, আর সেগুলো সবসময়ই আশেপাশেই ছিল, কিন্তু এরা ছিল আণুবীক্ষণিক প্রাণী। ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ নিয়ে এই লেখাটি দ্রষ্টব্য।
পৃথিবীর বয়স সংক্রান্ত অনুমান
ডারউইনের তত্ত্বের বিজ্ঞানসম্মত সমালোচনা করেন উইলিয়াম থম্পসন যাকে আমরা লর্ড কেলভিন নামেই চিনি; যদিও তার সমালোচনাটুকু তখনকার অসম্পূর্ণ জ্ঞানের হিসেবে বিজ্ঞানসম্মত ছিলো, পরবর্তীতে সেই সমালোচনার ভিত ভেঙে পড়ে। লর্ড কেলভিন তাপগতিবিদ্যার জনক ছিলেন। তাঁর হিসাব অনুযায়ী সৌরজগতের বয়স ২০ মিলিয়ন বছর থেকে ৪০ মিলিয়ন বছরের বেশি না। ডারউইনের তত্ত্ব সঠিক হওয়ার জন্য সময় দরকার ছিল কয়েক হাজার মিলিয়ন বা সোজা কথায় বিলিয়ন বছর। কেলভিনের হিসাব মতে ডারউইনের বিবর্তন মিথ্যা কারণ পৃথিবীর বয়সের চেয়ে কম। নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া সম্পর্কে জানার পর আমরা জানতে পারি সূর্যের আসল বয়স ৫০০ কোটি বছরের মত, আর সৌরজগৎ তথা পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছরের মত। আর এভাবে ডারউইনের জীববিজ্ঞান বিষয়ক তত্ত্ব আমাদের পৃথিবীর বয়স সম্পর্কেও ধারণা দেয় সেই ১৮৫৯ সালেই।
এ রকম বহু বহু জিনিস নিয়ে বিজ্ঞানিরা গবেষণা করে চলেছে । এসব নিয়ে জানতে ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন এখানে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে । বহু বহু আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। আর আমরা পরে আছি কোন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় । যেখানে আছে ঘৃণা আর শক্তির অপব্যবহার। কোন আবিষ্কার নেই । কোন নতুনের জন্ম নেই।
ক্রেডিটঃ https://bigganjatra.org/darwinian-prediction/
https://secure.jbs.elsevierhealth.com/action/getSharedSiteSession?rc=9&redirect=https%3A%2F%2Fwww.cell.com%2Fcurrent-biology%2Ffulltext%2FS0960-9822%2817%2930704-2
আরও পড়ুনঃ সার্জন অপারেশন থিয়েটারে সবুজ বা নীল রঙের কাপড় পরে থাকেন কেন?