পেডোফিলিয়া একটি ঘৃণিত মানসিক ব্যাধি। স্কুল-মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সবখানে চাইল্ড অ্যাবিউজ হচ্ছে । বাচ্চাদের দেখে আসক্তি এক ধরনের মানসিক দুরবস্থা । একে পেডোফিলিয়া (Pedophilia) বলা হয়। আর পেডোফিলিয়া রোগীদের বলে পেডোফাইল।
পেডোফিলিয়া কি?
পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তিরা যখন শিশুদের উপর যৌন-ক্রিয়া করে , তাকে পেডোফিলিয়া বলে, বা সংক্ষেপে “পেডোফিল” ও বলা হয়। এটা এক ধরনের যৌন বিকৃতি।এই সব ব্যক্তিরা শিশুদের দেখে তীব্র যৌন-উত্তেজনা বোধ করে। ফলে, তারা সুযোগ বুঝে শিশুদের উপর যৌন-ক্রিয়া করে। এই রোগ পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ পুরুষদের মধ্যেই এদের সংখা বেশি। মেয়েদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা যায়, তবে খুব কম। কিংবা মানুষ জানতেই পারে না, বা ধরা পড়ে না।
যৌন কাজ সম্পন্ন না করলেও এইসব মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকেরা অনেক কিছুই করে থাকে। তাদের কর্মকাণ্ডকে চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলা হয়ে থাকে ।
কাকে আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলছি?
• শিশুর গোপন অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ
• শিশুকে কারও গোপনাঙ্গ ধরতে বলা
• penetration of a child’s mouth with a penis
• শিশুর পর্নো ছবি তোলা
• শিশুকে পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং শিশুর সামনে নগ্ন হওয়া
• শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে ঢোকানো, বাল্যবিবাহ
• শিশুর সাথে বয়স অনুপযোগী sexual behavior নিয়ে আলোচনা
• শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা (যা ছেলে বা মেয়ে শিশু যে কারও ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে)
ইত্যাদি। সুতরাং, কেবল ধর্ষণ নয়, শিশু-যৌননির্যাতন একটি ব্যাপক পরিসরের শব্দ।
পেডোফিলিয়া : কারা করে এগুলো?
পেডোফিলিয়া এটা একটা সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়া আক্রান্ত রোগীরা কেবল শিশুদের (যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয়নি) প্রতি আসক্ত থাকে। কেন কিছু মানুষ এই ঘৃণ্য আচরণটি করে, এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেসব শিশু শৈশবে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এদের কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।
পেডোফাইলদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন: এরা প্রধানত হয় পুরুষ (তবে কদাচিৎ নারীও হতে পারে), সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এদের তেমন সখ্য থাকে না বরং এদের সখ্য থাকে শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে।
ধরুন, আপনার শিশু কারও দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হলো, এখন আপনার করণীয় কী?
১. আপনার শিশু যদি কারও নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।
২. আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।
৩. নিয়মিত একজন ভালো শিশু মনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউন্সিলিং করান।
৪. শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির। ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্পবয়সী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান। তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে-
• শিশুর গোপনাঙ্গে কোনো ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব
• মুখে ক্ষত
• পেট খারাপ
• খাওয়ায় অরুচি
• বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া
• হঠাৎ চমকে ওঠা
ইত্যাদি।
অনেক সময় দেখা যায় মুরুব্বি মানুষেরা বাচ্চাদের আমার বউ বা আমার বর বলে সম্বোধন করছে! এটা করতে দেয়া যাবে না! তাদের নিশেষ করবেন। যদি কোনো আত্মীয় বাচ্চাকে অস্বাভাবিক ভাবে আদর করতে দেখেন তবে তার থেকে সাবধান হোন।
আরও পড়ুন: হ্যালুসিনেশন আর ইলিউশন এই দুটোর পার্থক্য কী?