Home » পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাচ্ছে : আমাদের কী?
পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাচ্ছে _ আমাদের কী_

পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাচ্ছে : আমাদের কী?

অ্যামাজন বন, পৃথিবীর বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট! পৃথিবীর প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ২০% যোগানদাতা বলে অ্যামাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। সাপের মতো আঁকাবাঁকা নদী, হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী, সেই সাথে কয়েকটা উপজাতি মানুষ নিয়ে, পৃথিবীর রহস্যময় এক সৌন্দর্যের নাম অ্যামাজন অরণ্য। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীরা সব সময় অসুন্দর, তারা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারে না! তাই তো, গত কয়েকদিন ধরে নিঃশব্দে এই পৃথিবীর ফুসফুস, অ্যামাজন বন পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে! দাবানলের করাল গ্রাস খেয়ে নিচ্ছে অ্যামাজনকে! এক তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মাসে ৭২ হাজার বারেরও বেশি আগুন লেগেছে এই অরণ্যের নানা প্রান্তে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অ্যামাজনের বিস্তীর্ণ এলাকা।

পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাচ্ছে কেন? আসল কারণটা কী?

সাম্রাজ্যবাদ। পুঁজিবাদ। অর্থ সম্পদের লোভ। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাহীনতা। 

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এই বিপুল সংখ্যায় দাবানলে আক্রান্ত হচ্ছে অ্যামাজন বন। ইনপে আরও জানিয়েছে, অ্যামাজনে আগে যে দাবানল হতো না তা কিন্তু নয়! তবে গত বছরে এই একই সময়ের তুলনায় এই বছর ৮৩ শতাংশ বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে!

আসল ঘটনা অন্যখানে, ইনপে-র এই তথ্য সামনে আসার পরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জার বোলসোনারোর নির্দেশে বরখাস্ত করা হয়েছে ইনপে-র শীর্ষ কর্তা রিকার্ডো গ্যালভাওকে। অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ওই সংস্থার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য রটাচ্ছেন। এই ঘটনার সাথে আরও একটা তথ্য সামনে এসেছে। সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেই দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তহবিলে বরাদ্দ অনেকাংশ কমিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো।  এ কারণে তার দিকে আঙুল ওঠা স্বাভাবিক! আবার সরকার পক্ষের অনুমান, সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে অ্যামাজনে ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।

ইনপের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বোলসোনারো বলেন, ‘যা ঘটছে তার সব কিছুই এনজিও-র লোকেদের অ্যামাজনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আসার দিকে ইঙ্গিত করছে।’

কে বা কারা আসল নাটের গুরু সেই বিচারে আমরা আপাতত না যাই! কিন্তু এটা তো নিশ্চিত যে, মানুষই নিজের স্বার্থের জন্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়োল মারছে! এই ভেলকি স্বার্থ কীসের? অর্থ, ধন, সম্পদের! অনেকের তথ্যমতে, অ্যামাজনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে প্রচুর তেল-গ্যাস। সেগুলোর লোভেই হয়তো কেউ অ্যামাজনকে নিশ্চিন্ন করে দিচ্ছে! আবার হতে পারে উপজাতিদের উচ্ছেদ করে, বনের জায়গা দখলের জন্য এই নির্মম ষড়যন্ত্র!

তাতে আমাদের কী?

প্রকৃতি কখনো নিজের কাছে ঋণ রাখে না! তার প্রতি অনাচারের ঋণ সে ঠিকই ফিরিয়ে দেবে! অ্যামাজনের এই পরিণতি শুধু ব্রাজিল নয়, সমগ্র পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলবে!

ইমপে-র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে ৭৫০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে অ্যামাজনের, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি ছিল। আর ২০১৯ সালে আপাতত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, সেটা থেকে মনে করা হচ্ছে যে, অ্যামাজন বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার এই হার তিন গুণ বেড়ে গেছে প্রায়। শুধু গত মাসেই ২২০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল পুড়ে গেছে, যা গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৮০ শতাংশ হারে বেশি।

অ্যামাজন বনভূমির ৬০%-ই ব্রাজিলে অবস্থিত। অ্যামাজনের আগুন থেকে উৎপন্ন ঘন ধোঁয়ার কারণে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে দিনের বেলাতেই অন্ধকার নেমে এসেছে প্রায়। পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, অ্যামাজন বন সংলগ্ন অ্যামাজোনাস ও রোনডোনিয়া রাজ্যের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ধোঁয়া দু’হাজার ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সাও পাওলোতে এসে পৌঁছেছে! এ সপ্তাহের প্রায় প্রত্যেক দিন দুপুর ৩টের পর থেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য শহরটি অন্ধকারে ডুবে ছিল বলে জানা গিয়েছে।

এ ভাবে আগুনে পুড়ে পুড়ে অ্যামাজনের উজাড় হওয়া থামানো না গেলে আমাদের পুরো পৃথিবীর জন্য কঠিন ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। পরিবেশবিদদের মতে, বিশ্বের সব চেয়ে বড়ো এই চিরহরিৎ বনাঞ্চল, অ্যামাজনে বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা রয়েছে। এই বন-ই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি খানিকটা ধীর করে রেখেছে। এই বনাঞ্চলও নষ্ট হয়ে গেলে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৪-৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস! এতে অ্যান্টার্টিকের বরফ গলে গলে বৃদ্ধি পাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা আর জলের অতলে হারিয়ে যাবে পৃথিবী অধিকাংশ জায়গা! সবার আগেই সমুদ্রের জলে ডুববে নদীমাতৃক বাংলাদেশ! বৃষ্টি কমে যাবে, পানীয় জলের মারাত্মক অভাব দেখা দেবে! মোট কথা পৃথিবী প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।

বন উজাড়ে অন্য দেশের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও! আমরাও চোরাই গাছ কেটে, মাটি চুরি করে, প্রাণিবৈচিত্র্য নষ্ট করে বনাঞ্চল উজাড়ের প্রতিযোগিতায় ভালো মতো আগাচ্ছি। সাফল্যের নিদর্শন হিসেবে আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের দিকে তাকাতে পারি। যে সুন্দনবন নিয়ে এক সময় আমরা গর্ব করতাম, তার অনেক কিছুই চলে গেছে লোভী মানুষের গ্রাসে! অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে, চোখের সামনে সব গগনচুম্বী বিল্ডিং আর বিল্ডিং! কোথাও একটা গাছও নেই, এক টুকরো সবুজও নেই!

বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষ কবে যে বুঝবে, একমাত্র প্রকৃতি ছাড়া অর্থ-ধন-সম্পদ আমাদের কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে পারবে না! টাকা দিয়ে অক্সিজেন, খাবার জল, বৃষ্টি, কিছুই তো আর পাওয়া যাবে না!

পৃথিবীকে বাঁচাতে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই সকলের উচিত, গাছ না কেটে, বন উজাড় না করে বরং গাছ লাগানো! আর আমাজন-সুন্দরবনসহ পৃথিবীর সব অরণ্যকে রক্ষা করা।

আরও পড়ুন: আপনি কি জানেন, নিজের অজান্তেই প্রতিনিয়ত খাচ্ছেন প্লাস্টিক?

Advertisement: Blog Making Package: Get A Full Ready Made Website For You From Us! Contact Now!

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: