নেক্রোফিলিয়া কী?
নেক্রোফিলিয়া [Necrophilia] শব্দের শুরুটা এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে । নেক্রোস অর্থাৎ মৃত (nekros; dead) এবং (philia; love) ফিলিয়া অর্থাৎভালোবাসা বা আসক্তি। ‘নেক্রোফিলিয়া‘ এক ধরনের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রোফাইল [Necrophile] বা নেক্রোফিলিয়াক [Necrophiliac]; নেক্রোফাইলরা মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। অর্থাৎ মৃত দেহের প্রতি যারা শারীরিক আসক্তি অনুভব করে তারা এই বিরল রোগে ভুগে থাকে। এমন কিছু উদাহরণ প্রথমে দেওয়া যাক।
নেক্রোফিলিয়া [Necrophilia] রোগের কিছু উদাহরণ:
নেক্রোফিলিয়ার এক আলোচিত ব্যক্তি হলেন ডা. কার্ল ভ্যান ক্যাসল। ১৯৩০ সালে ফ্লোরিডায় তিনি ডাক্তারি পেশায় থাকা অবস্থায় মারিয়া এলেনা উজ নামের এক সুন্দরী টিবি রোগীর চিকিৎসা করেন। চিকিৎসা করতে করতে গভীরভাবে ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে যান ডা. ক্যাসল। ডা. ক্যাসল মেয়েটিকে বাচাঁনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। মারিয়ার মৃত্যুর পর তাকে জাকজমক পূর্ণভাবে সমাহিত করা হয়।
মারিয়ার সমাধির পর তার দেহে যেন পচন না ধরে সে জন্য ডা. ক্যাসল তার সারা গায়ে মোম দিয়ে দেন এবং পারফিউম ছড়িয়ে দেন। প্রতিদিনই ডা. ক্যাসল মারিয়ার সমাধিতে যেতেন এবং সমাধির ওপরের অংশ সরিয়ে মৃত মারিয়ার সাথে মিলিত হতেন। এভাবে প্রতিদিন ডা. ক্যাসলের মারিয়ার সমাধি পাশে যাওয়া নিয়ে প্রতিবেশীরা সমালোচনা শুরু করলে ডা. ক্যাসল একদিন সবার অলক্ষ্যে মারিয়াকে নিজ গৃহে নিয়ে আসেন।
মারিয়ার দেহে মোম ও পারফিউম দিয়ে নববধুর গাউন পরিয়ে মৃত মারিয়ার সাথে নিয়মিত মিলিত হতে থাকেন ডা. ক্যাসল। প্রকৃতপক্ষে মারিয়ার শরীরে তখন মাংস অবশিষ্ট ছিল না কেবল হাঁড় ছাড়া। ডা. ক্যাসল মারিয়ার শরীরের বিশেষ অঙ্গে একটি টিউব বসিয়ে নিয়মিত যৌন কার্য করতেন। প্রতিনিয়ত মোম ও পারফিউম দেওয়ার পরও মারিয়ার দেহের পচন এবং দুর্গন্ধ ঠেকানো যাচ্ছিল না। প্রতিবেশীরা এ নিয়ে আপত্তি জানায় এবং পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ এসে ডা. ক্যাসলের রুম থেকে মারিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং মারিয়ার পরিবারের আবেদন নিয়ে মারিয়াকে পুনরায় সমাধিস্থ করে। পরবর্তীতে ডা. ক্যাসল একটি পুতুলকে মারিয়ার মুখোশ পরিয়ে তার সাথে বসবাস করতে থাকেন। এভাবে আমৃত্যু মারিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা অব্যাহত ছিল। এ রকম বৈসাদৃশ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করলেও ব্যক্তি জীবনে ডা. ক্যাসল ছিলেন নিপাট ভদ্রলোক। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি মুভিও নির্মিত হয়।

কাজ করত নিউ জার্সির এক হাসপাতালে। আর সেখানেই ধরা পড়ে মৃত রোগীদের সাথে যৌন কর্ম করতে গিয়ে। সাত বছরের জেল হয় তার।

ফ্রান্সের এক ছোটো শহরে কবর খোঁড়ার কাজ করত। শতাধিক মৃতদেহের সাথে যৌন মিলন করেছে সে। পুলিশ তার ঘরে একটি তিন বছরের বাচ্চা মেয়ের মৃতদেহ পায়, যার সাথে সে যৌনকর্ম করেছিল। এমনকি সে একটি মেয়ের মাথার খুলি সবসময় কাছকাছি রাখত আর এটিকে বলত “আমার বউ”। তার ভাষ্যমতে, সে নাকি মৃতদেহের সাথে গল্প করার চেষ্টাও করত। কিন্তু যখন মৃতদেহগুলি তার কথার উত্তর দিত না, তখন সে দুঃখ পেত ও হতাশ হয়ে পড়ত। তাকে সারা জীবনের জন্য এক মানসিক রোগীদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তার নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খুন করেছে ৩০ জনকে। আসল সংখ্যা আসলে আরও অনেক বেশি। এদের অনেকের সাথেই খুন করে যৌনকর্ম করেছে সে। তার প্রথম শিকার লিনেট কালভার নামের বছর বারোর একটি মেয়ে, যাকে সে জলে ডুবিয়ে মেরে তারপর মৃতদেহের সাথে যৌনমিলন করেছিল। ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। তাকে নিয়ে নেটফ্লিক্স এ একটি সিরিজও আছে।
সৌদি আরবের ‘আল অ্যারাবিয়া নিউজ’ পত্রিকায় ২৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত একটি খবর দিয়ে শুরু করা যাক। একটি খসড়া আইনের বিরুদ্ধে মিশরের নারীদের বিক্ষোভের একটি খবর। আইনটিতে বলা হয়েছে একজন পুরুষ তার মৃত স্ত্রীর মৃত্যুর ছয় ঘণ্টা নাগাদ স্ত্রীর মৃত দেহের সাথে যৌনকার্য করতে পারবে। এটিকে তারা নাম দিয়েছে বিদায়ী ‘যৌন মিলন’ বা ‘Farewell Intercourse’। এই অদ্ভুত ও বিকৃত যৌনাচারটিও নেক্রোফিলিয়া।
নেক্রোফিলিয়া একটি অন্যতম প্রচলিত প্যারাফিলিয়া (Paraphilia) বা বিকৃত যৌনাচার। নেক্রোফাইলরা মৃতদেহের সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কর্মটি বেশিরভাগ সময় করে থাকে পুরুষরা এবং এর শিকার হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর মৃতদেহ।
যৌনতার ধরনের উপর ভিত্তি করে নেক্রোফিলিয়াকদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. Necrophilic homicide বা নেক্রোফিলিক হত্যা: এক্ষেত্রে নেক্রোফিলিকরা যৌনকার্য করার উদ্দেশ্যে খুন করে থাকে।
২. Regular necrophilia বা স্বাভাবিক নেক্রোফিলিয়া: এ ধরনের নেক্রোফিলিকরা মৃতদেহ খুঁজে বের করে বা সংগ্রহ করে যৌনকার্য করে থাকে।
৩. Necrophilic fantasy বা কল্পিত নেক্রোফিলিক: এ ধরনের নেক্রোফিলিকরা মৃতদেহের সাথে যৌনকার্য কল্পনা করে মাত্র।
এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কয়েক ধরনের নেক্রোফিলিয়ার উদাহরণ রয়েছে।
ইতিহাসবেত্তা হেরোডোটাসের মতে, প্রাচীন মিশরে সমাজের উঁচু স্তরের কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেলে তিনি মৃত দেহটিকে কয়েকদিন রেখে তারপর সৎকারকারীদের কাছে দিতেন। এর কারণ হলো, এতে করে লাশটি বিকৃত হয়ে যেত এবং সৎকারকারীদের মধ্যে যদি কোনো নেক্রোফাইল থেকে থাকে, সে আর তার যৌনলিপ্সা পূরণ করতে লাশের ওপর চড়াও হতে পারত না। প্রচলিত মিথ অনুসারে, রাজা হেরোড তার স্ত্রী ম্যারিয়ানির মৃত্যুর সাত বছর পর্যন্ত মৃতদেহের সাথে যৌনকার্য করেছেন। একই কাহিনি প্রচলিত আছে রাজা ওয়াল্ডিমার এবং রাজা চার্ল ম্যাগনের নামেও।
সাধারণত লাশকাটা ঘর বা মর্গে কাজ করে এমন লোকজন, ডোম, মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, কবরে বা সমাধিতে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে নেক্রোফাইলদের খুঁজে পাওয়া যায়। এর বাইরেও নেক্রোফিলিয়াকদের অস্তিত্ব আছে, যারা প্রয়োজনে লাশ চুরি করে থাকে।
আরও পড়ুন: অ্যালিসা কার্সন কি প্রথম মানুষ হিসেবে মঙ্গলগ্রহে যাবেন?