Home » অযাচিত যৌন চাহিদা বা ধর্ষণের কারণ কী?
ধর্ষণের কারণ কী

অযাচিত যৌন চাহিদা বা ধর্ষণের কারণ কী?

পত্রিকার পাতা কিংবা অনলাইন নিউজ। সবখানেই ধর্ষণের নিউজ। ধর্ষণ শুনলেই মেয়েদের কথায় চিন্তা আসে। কিন্তু ধর্ষণের শিকার কি শুধুই মেয়েরাই হচ্ছে? পাঁচ-দশ বছরের ছেলে কিংবা  ট্রান্সজেন্ডারেরও রেহায় মিলছে না। এই কারণেই ২০১৩ এ আমেরিকার এফবিআই ধর্ষণের সংজ্ঞাতে পরিবর্তন এনেছে। এই ধর্ষণের কারণ কী?

এখন প্রথম কথা হচ্ছে ধর্ষণ আসলে কীসের জোরে করে মানুষ! মনের জোরে নাকি গায়ের জোরে? প্রথমে আসা যাক মন নিয়ে।

ধর্ষণের কারণ কী : মনের জোরে ধর্ষণ কীভাবে করে?

ফ্রয়েড এর মতে যাকে আমরা মন বলি সেটি মূলত তিনটি সত্ত্বার সমন্বয়ে গঠিত– ইড, ইগো এবং সুপার ইগো। অর্থাৎ মানব মন এই তিনটি গাঠনিক উপাদানে তৈরি-

“ইড” মূলত মানুষের জৈবিক সত্ত্বা। মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পূরণ করে ইড। এটিকে “মন যা চায় তাই” এর সাথে তুলনা করা যায়।

“ইড” মানুষ এবং পশু সবার মাঝেই সমানভাবে বিরাজমান। এর কোনো মানবিক দিক বা বিকাশ নেই। “ইড” এর পুরোটাই লোভ লালসা ও কাম চিন্তায় ভরপুর। “ইড” এমনভাবে মানুষকে প্ররোচিত করে যে, প্ররোচনায় মানুষ যেকোনো অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে, খুন-ধর্ষণ পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এক কথায়, “ইড” হচ্ছে আমাদের ভেতরের সুপ্ত পশু।

“সুপার ইগো” হচ্ছে মানুষের বিবেক। ইড যখন জৈবিক কামনা বাসনা পূরণ করতে উদ্দীপ্ত করে, তখন সুপার ইগো একে বাধা দেয়। সুপার ইগো মানুষকে সব সময় মানবিক দুর্বলতার উর্ধ্বে উঠে ভালো কাজ করার জন্য মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। এই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে ব্যক্তির নৈতিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের ওপর।

ধর্ষণের কারণ কী
Orginal Link

অন্যদিকে ইগো হচ্ছে এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টিকারী একটি অবস্থা। ইড এবং সুপার ইগোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই এর কাজ।

ইড বলবে– I need to get it.

সুপার ইগো বলবে– You have no right to get it

ইগো বলবে– I need some plan to get it. অর্থাৎ ইগো ইডের ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করবে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।

পশুরা ইড চালিত। তাই তারা কেবল জৈবিক চাহিদা (খাবার এবং যৌনতা) পূরণেই ব্যস্ত। আবার মানুষের মধ্যে যখন “ইড” ডমিনেন্ট হয়ে যায়, তখন সে উন্মাদ ও অমানুষ হয়ে যায়। আর যখন কেবল সুপার ইগো কাজ করে– তখন সে সাধু সন্ন্যাসী পবিত্র হয়ে যায়। ইগো এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

যেমন মানুষের মধ্যে যখন সুপার ইগো ডমিনেন্ট হয়, তখন অনেক সময় তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। ইগো তখন ব্যালেন্স করে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সুপার ইগোকে মানতে গিয়ে আমরা আমাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে পারি না। আমাদের এই অপূরণীয় চাহিদায় মন তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখন বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে ইগো কাজ করে।

জীব হিসেবে মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর তেমন বেশি ডিফারেন্স নেই। উভয়েরই ইড আছে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এর সাথে দুইটা জিনিস আছে ইগো এবং সুপার ইগো। ধর্ষণের কারণ হিসেবে মানুষের ইডকে দায়ী করা যায়!

কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি-

পর্নো মুভি দেখতে চমৎকার, অতএব পর্নো দেখো (ইড)!

পর্নো মুভি দেখা নৈতিকতা বিরোধী, মানুষ এটাকে খারাপ বলবে, অতএব দেখা যাবে না (সুপার ইগো)!

লুকিয়ে পর্নো মুভি দেখো, অসুবিধা কী? মানুষ তো জানবে না, আর মনের চাহিদাও মিটল (ইগো, ব্যালেন্স করছে দুই দিক)!

মেয়েটি সুন্দরী, অতএব ওকে ইভটিজিং বা রেইপ করো (ইড)!

রেইপ, ইভটিজিং অপরাধ, অতএব করা যাবে না (সুপার ইগো)!

মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করো, সম্ভব হলে প্রেমের প্রস্তাব দাও, মন পাওয়ার চেষ্টা করো, মন পেলে শরীর কোনো এক সময় পাবে (ইগো)!

ইড, ইগো এবং সুপার ইগোর আপেক্ষিক তীব্রতা স্থিতিশীল নয়, বরং পারিপার্শ্বিকতার সাথে পরিবর্তনশীল। যেমন সুপার ইগো তথা বিবেক অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সে তার কাজ অর্থাৎ অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারে না।

দেহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে– খাবার না খেলে/পেটে খাবার না থাকলে খিদের অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটি জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু ক্রমাগত না খেয়ে থাকলে, দেহের দাবি অস্বীকার করলে দেহ অসুস্থ হয়ে যায় তখন সে স্বাভাবিক খিদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।

তেমনি সুপার ইগো তথা বিবেকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে– সে খারাপ কাজে আপনাকে বাধা দিবে, কিন্তু যখন আপনি কন্টিনিউয়াসলি সুপার ইগোকে অস্বীকার করবেন, অমান্য করবেন– তখন এটি দুর্বল হয়ে যাবে এবং অন্যায় কাজে কার্যকর বাধা দিতে পারবে না।

একজন মাদকাসক্ত প্রথম যে দিন মাদক সেবন করে, তখন “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচণ্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মাদক সেবন তার এই অনুশোচনার তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

প্রথম যে ব্যক্তি পর্নো দেখে, “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচণ্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু সে যখন আসক্ত হয়ে যায়, তখন ধারাবাহিকভাবে অনুশোচনাবোধ কমে আসে। এভাবে মানুষ যখন ইড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন আর ধর্ষণ করা তার জন্য কঠিন কিছু না।

ধর্ষণের কারণ আরও অনেক রয়েছে! এটা মনের একটা ব্যাখ্যা মাত্র। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ধর্ষক এতো সাহস কোথা থেকে পায়। উত্তর হলো সেই সাহস তার মন থেকেই আসে।

সূত্র: যুগান্তর

আরও পড়ুন: আইনস্টাইন কি কোনদিনও ভুল করেনি?

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: