দৈনন্দিন জীবনের চলার পথে এমনটা সবার সাথেই কম বেশি হয়েছে যে আমারা কোন জিনিস এক স্থানে রেখে তা কিছুতেই মনে করতে পারছি
না। আবার প্রায়ই আমরা আমাদের খুব জানা পরিচিত জিনিস ভুলে যাই। অনেক চেষ্টায় ও তা আর মনে পরে না। সচরাচর এমনটা বৃদ্ধদের সাথে
হয়ে থাকে । ডিমেনশিয়া নিয়ে আমাদের এখনকার আলোচনা।
আমার নানাভাইয়ের মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে অদ্ভুত এক সমস্যা দেখা যায়। সে একই প্রশ্ন বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকতেন। সামনের মানুষটি যতক্ষণ তার কাছ থেকে উঠে চলে না যেত সে একই প্রশ্ন করতে থাকতেন। সে যে এই প্রশ্নটিই কিছুক্ষণ পূর্বে জিজ্ঞেস করেছিল তা সে বেমালুম ভুলেই যেতেন।
পরিবারে অন্যদের কাছে বিষয়টি খুব স্বাভাবিক ছিল কারণ বৃদ্ধ বয়সে এমনটা অনেকের সাথেই হয়। তবে আপাত দৃষ্টিতে এটিকে একটি স্বাভাবিক ঘটনামনে হলেও মেডিকেলের ভাষায় এমন ভুলে যাওয়াকে ডিমেনশিয়া বলা হয়।
ডিমেনশিয়া কি ?
এটি হচ্ছে একটি স্মৃতিশক্তি জনিত রোগ। মাথায় আঘাত পাওয়া বা বার্ধক্য জর্নিত কারনে যদি মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ বা টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এ
ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকে আবার একে রোগ না বলে রোগের উপসর্গ বলে দাবি করে ।
ডিমেনশিয়া কাদের হয় ?
এটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। তবে বয়স্ক লোক বা যাদের বয়স ৫৬ এর উপরে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আবার বাবা অথবা মায়ের এ রোগ থাকলে সন্তানের ও হতে পারে ।
ডিমেনশিয়া কেন হয় ?
মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে এ রোগের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন, অনিয়অনিয়ন্ত্রিত ঘুম,
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধুমপানের কারণে এটি হতে পারে৷
ডিমেনশিয়ার ধরন :
একে সাধারণত রোগ না বলে রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরা হয় যা পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।
আলঝেইমার (Alzheimer’s)
১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক আ্যলয়েস আলঝেইমার সর্বপ্রথম এই রোগের বর্ননা দেন। তার নাম অনুসারে এর নাম করা হয় আলঝেইমার। এটিকে স্মৃতিভ্রংশের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। এই রোগের তেমন কোন প্রতিকার নেই। এর অগ্রগতির সাথে সাথে মৃত্যু ও হতে পারে। এ রোগের প্রথম দিকে রোগী নাম মনে রাখতে পারে না, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলি মনে রাখতে পারে না। ধীরে ধীরে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন : চিন্তাধারায় সমস্যা, কথায় অসামঞ্জস্যতা, কনফিউশন ইত্যাদি ।
হান্টিংটন (Hantington”s)
এটি একটি স্নায়ুবিক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রোগ যা মূলত একটি ক্ষতিগ্রস্ত জিন দ্বারা সৃষ্ট। ক্রোমোজমের ৪নং জোড়ার একটিতে ত্রুটি থাকার কারনে স্নায়ু কোষ গুলির একটি প্রগতিশীল ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত গতিবিধি লক্ষ করা যায়।
পার্কিনসন ( Parkinson’s )
সবথেকে পরিচিত নিউরো-ডিজেনারেটিভ রোগের মধ্যে এটি হল ২য়। ইংরেজ চিকিৎসক জেমস পার্কিনসনের নাম অনুসারে এর নাম করন করা হয়। স্নায়ুতে প্রিসাইনাপ্টিক প্রটিন জমা হওয়া এর প্রাথমিক লক্ষন। এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন পারকিনঅসোনিসম (Parkinsonism) বা প্যারালাইসিস এজিট্যান্স ( paralysis agitans) বা শেকিং পালসি ( shaking pulsy) এ রোগের মারাত্মক পর্যায়ে মস্তিষ্কের নার্ভগুলি
ডোপামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরন বন্ধ করে দেয়। ফলে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং মারাত্মক আকার নেয়।
ডিমেনশিয়ার লক্ষ্মণ :
(১) সাম্প্রতিক ঘটনা, নাম ও চেহারা ভুলে যাওয়া।
(২)প্রায়শই অল্প সময়ের মধ্যে একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি
করা।
(৩)জিনিস পত্র ভুল স্থানে রাখা
(৪)কোন পরিচিত স্থানে হারিয়ে যাওয়া
(৫)অন্যদের কথা বুঝতে অসুবিধা
(৬)দিন, তারিখ, সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া
(৭)মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা এবং সরল সিদ্ধান্ত
গ্রহণে অক্ষমতা
(৮) ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ পরিবর্তন হওয়া
(৯)কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুজে না পাওয়া
(১০) ডিপ্রেশন ও ঘুমে সমস্যা
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ??
১.অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করা
২.নিয়মিত হাটা বা ব্যায়াম করা
৩.সঠিক খাদ্যাভ্যাস
৪.কোন কিছু শোনার সময় মনোযোগী হওয়া
৫.ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করা
চিকিৎসা :
যদিও এ রোগের কোন ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয় নি। তবে প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়লে ওষুধের মাধ্যমে এর লক্ষ্মণ গুলো কিছুটা কমানো যেতে
পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমনটা হবেই তাই এটি নিয়ে বেশির ভাগ মানুষই সচেতন থাকে না। তবে পরিবারের
সদস্যদের সচেতনতা এদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ।