বাংলাদেশে চাষের জমি যে হাড়ে কমতে শুরু করেছে আর ভেজাল হচ্ছে তাতে নিজের ছাদে নিজে চাষ করে খাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা । বিজ্ঞাননিউজ এ এখন দেখাবো কীভাবে আপনি এটা করবেন। অ্যাকুয়াপনিক্স পদ্ধতি সেরা আবিষ্কার এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
আজ থেকে এক শতাব্দী বা তারও কম সময়ে খালি ও আবাদযোগ্য ভূমির পরিমান হবে নগণ্য, যার ফলে এই বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য যোগান দেয়া হয়ে পড়বে অত্যন্ত কঠিন। এসব জমিতে তখন থাকবে আকাশচুম্বী ভবন, আর বিশাল ছাদগুলোও থাকবে। হয়তো সেগুলো অব্যবহৃতই থেকে যাবে। কিন্তু এই ছাদগুলোতেই যদি সমন্বিতভাবে মাছ ও সবজির চাষ করা যায় এখন থেকেই, তবে এক দিকে মিটবে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা, অন্য দিকে পাবেন তাজা ও ফরমালিনমুক্ত মাছ, ফলমূল, শাকসবজিআর এ পদ্ধতিটির নাম, অ্যাকোয়াপনিক্স (Aquaponics)।
অ্যাকুয়াপনিক্স কী ? 
অ্যাকুয়াপনিক্স হলো অ্যাকুয়াকালচার (মাছ চাষ) ও হাইড্রোপনিক্সের (মাটি ছাড়া উদ্ভিদ উৎপাদন) এক সমন্বিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাছের বর্জ্য উদ্ভিদের জন্য একটি জৈব খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং উদ্ভিদ প্রাকৃতিকভাবে মাছের জন্য পানি ফিল্টার করে। এ পদ্ধতি স্বল্প ও বৃহৎ যে কোনো আকারেই করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে কোনো সার, কীটনাশক বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না বিধায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
এই পদ্ধতিতে কোনো প্রকার মাটির ব্যবহার ছাড়াই এ পদ্ধতিতে মাছ, শাকসবজি, ফলমূল ও ভেষজ উদ্ভিদের চাষ করা যাবে। বসতবাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনায় সুবিধামতো আয়তনের সাধারণ প্লাস্টিক ট্যাংক, ড্রাম বা ব্যারেলে অল্প পুঁজিতেই এই প্রকল্প শুরু করতে পারেন। ড্রামের বা ট্যাংকের মধ্যে পানি পূর্ণ করে সেখানে শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, কই, পাবদা, চিংড়ী সহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের মাছ চাষ করতে পারেন। আর এর সাথে সমন্বিতভাবে সবজি চাষ করতে হলে একটি আলনা আকৃতির কাঠামো তৈরী করে তাতে তিন সারিতে উল্টো করে একটির নিচে আরেকটি দুই পাশে কাটা প্লাস্টিকের বোতল বসিয়ে তাতে নুড়ি পাথর দিয়ে সবজির চারা লাগাতে হবে। এবার মাছের ট্যাংকের পানি বালতি করে উপরে তুলে সেখান থেকে সাইফোনিক প্রক্রিয়ায় ফোঁটা ফোঁটা করে গাছের চারাতে সরবরাহ করা হয়। এই পানি পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচে আবার মাছের ট্যাংকে ব্যবহার করা হয়। চাইলে স্বল্প ওয়াটের মোটরও ব্যবহার করতে পারেন পানি চক্রাকারে ব্যবহার করার জন্য।
মাছের নিঃসৃত রেচন পদার্থ হলো অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ, অর্থাৎ নাইট্রোজেন যুক্ত। গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া উক্ত নিঃসৃত পদার্থকে ভেঙ্গে নাইট্রেটে পরিণত করে যা গাছে পুষ্টি সরবরাহ করে। তাছাড়া মাছের নিঃসৃত রেচন পদার্থে এমন অনেক পদার্থ আছে যা গাছের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এভাবে পানি দূষণমুক্ত হয়ে পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এর ফলে একই পানি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় ও পানি পরিবর্তনের ঝামেলাও পোহাতে হয় না।
জানলে অবাক হবেন যে এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ,শাক-সবজি ও ফলমূল কোন প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক এর প্রভাবমুক্ত। কারণ এখানে কোন কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ফরমালিনের এই যুগে স্বল্প পরিশ্রম ও স্বল্প ব্যয়ে এই রকম তাজা শাকসবজি, ফলমূল এবং মাছ উৎপাদন এর সুযোগ এর চেয়ে ভালো হতে পারে কি? এ পদ্ধতিতে প্রধানত শসা, টমেটো, করোলা, শিম, বেগুন, পুদিনা, কলমী, লেটুস, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর ও বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ যেমন থানকুনি বেশ ভালো হয়। মাছের খাদ্য আপনি বাসায়ই তৈরি করতে পারেন সহজেই। আর খাদ্য তৈরির উপাদান জানার জন্য এবং এ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ইন্টারনেট, গুগল, ইউটিউব তো আছেই।