আগামী শতাব্দীতে ছোটো, দ্রুত অভিযোজিত, অত্যন্ত উর্বর, পোকামাকড় ভক্ষণকারী ক্ষুদ্র প্রাণীরাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে বলে মত দিয়েছে একটি গবেষণা। এই ‘বিজয়ী’ প্রাণীদের মধ্যে তীক্ষ্ণ দাঁতবিশিষ্ট ইঁদুরের মতো দেখতে বামন গারবিল এবং সুকণ্ঠী গায়ক পাখি, যেমন সাদা কপালবিশিষ্ট চড়ুই [আফ্রিকা অঞ্চলে দেখা যায়] ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। পরিবেশের ক্রমপরিবর্তনের বিপরীতে কম অভিযোজিত, ধীর গতিসম্পন্ন ও কম উর্বরতা বিশিষ্ট প্রজাতিগুলো একেবারেই বিলুপ্ত হতে পারে পৃথিবী থেকে। সেই বিলুপ্ত হবার পথে রয়েছে টাওয়ার ঈগল এবং কালো গণ্ডারের মতো অনেক প্রাণীরা।

গবেষকদের ধারণা মতে, পরবর্তী শতাব্দীতে মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গড় আকার ২৫ শতাংশ কমে যাবে। প্রায় ১৩০,০০০ বছর পূর্বে পৃথিবীর প্রাণিজগতে যে বিস্তর ও দ্রুত বিবর্তন সংগঠিত হয়েছিল, তাতে প্রজাতিদের শরীরের আকার ১৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তখনকার তুলনায় বর্তমানের এই আকার বিলুপ্ততা বিশাল এক প্রভাব ফেলেবে। এক্ষেত্রে সুবিধা পাবে ক্ষুদ্র প্রাণীরাই !
এই গবেষণাটির বিস্তারিত সম্প্রতি ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সাউথাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করা গবেষক রব কুক এই গবেষণার মূল লেখক। তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃতিতে পাখি ও স্তন্যপায়ীদের জন্য সবচেয়ে বড়ো হুমকি মানবজাতি। কারণ: মানবজাতি পৃথিবীতে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বন কেটে ফেলে শহর করা, বন্যপ্রাণিদের শিকার করা, বিভিন্নভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব সৃষ্টির মতো ভয়ানক কাজ অজান্তেই করে যাচ্ছি আমরা মানুষেরা।’
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক কীভাবে আমাদের ক্ষতি করছে?
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে প্রজাতির আকার কমার পূর্বাভাস দিয়েছি তা পরিবেশ ও বির্বতনের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ীত্বে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রজাতির আকারের এই অবনতি ঘটছে পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে। অবশ্য বিস্ময়করভাবে আমাদের বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রে অনন্য ক্রিয়া সম্পাদনকারী প্রজাতি বিলুপ্তির মাধ্যমে এটিও পরিবর্তনের প্রভাবক হিসাবে শেষ হতে পারে।’
গবেষকরা প্রায় ১৫,৪৮৪ প্রজাতি স্থলজ স্তন্যপায়ী ও পাখিদের উপর নিরীক্ষা চালায় এবং প্রকৃতিতে প্রতিটা প্রজাতির ভূমিকা সম্পর্কিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করেন। বৈশিষ্যগুলো হলো: শরীরের ভর, ছোঁ বা থাবার আকার, বাসস্থানের প্রস্থ, খাদ্য, প্রজন্মের মধ্যে সময়কাল। উপরন্তু, গবেষকরা পরবর্তী শতাব্দীতে কোন কোন প্রাণী সর্বাধিক বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা নির্ধারণ করার জন্য হুমকিপ্রাপ্ত প্রজাতিদের আইইউসিএনের প্রদত্ত লাল তালিকা ব্যবহার করেছেন। তারা তাদের অভিক্ষেপগুলো এবং জীববৈচিত্রের ক্ষতি মূল্যায়ন করার জন্য এই সমস্ত তথ্য একত্র করেছিলেন। এটি করার ক্ষেত্রে তারা আধুনিক পরিসংখ্যান সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন।
সাউথাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেলিক্স ইজেনব্রোড বলেছেন, ‘আমরা দেখিয়েছি পরিবেশগত কারণে যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিগুলোর ক্ষতি হবে, সেটা র্যান্ডমলি হবে না। বরং একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট প্রাণিগুলোকে আলাদা করে হবে। অবশ্যই এই ফিল্টারিংটা তাদের বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের যে অভিযোজন ক্ষমতা কিংবা দুর্বলতা তৈরি হবে তার উপর নির্ভর করবে।’
কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির গবেষণা চেয়ারম্যান অ্যামান্দা বেটস বলেছেন, ‘প্রাণী বিলুপ্তি পূর্বে দুঃখজনক, নির্ণায়ক ও অনিবার্য হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু এখন এগুলো টার্গেটেড সংরক্ষণ কর্মের সুযোগ হিসাবেও দেখা যেতে পারে। যতদিন একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, ততদিন সংরক্ষণ ব্যবস্থা করারও সময় রয়েছে। এবং আমরা আশাকরি আমাদের মতো এই ধরনের গবেষণা এই কাজের জন্য সহায়ক হবে।
গবেষকরা আশাবাদী যে, এই বিষয়ে আরও গবেষণা- আবাসস্থল এবং বাস্তুতন্ত্রগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্তির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে দেখতে ও বুঝতে সহায়তা করবে।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডেইলি
জার্নাল রেফারেন্স:
- Robert S. C. Cooke, Felix Eigenbrod, Amanda E. Bates. Projected losses of global mammal and bird ecological strategies. Nature Communications, 2019; 10 (1) DOI: 10.1038/s41467-019-10284-z