আইনস্টাইন এর নাম শুনলেই হয়তো মনের মধ্যে একটা শ্রদ্ধা চলে আসে। কিছু লোক জেনে বুঝে শ্রদ্ধা করে আর কিছু আছে যারা আইনস্টাইন সম্পর্কে শুনতে শুনতে শ্রদ্ধা করা শুরু করেছে। এত বড়ো বিজ্ঞানীর কি কোনো ভুল হতে পারে? প্রশ্নটাও আসলে মজার। সবাই হয়তো জেনে থাকবেন বিজ্ঞানীদের ভুলো মন সম্পর্কে। কিন্তু তা কেমন হতে পারে! সূত্রও কি ভুল বলতে পারে?
আইনস্টাইন এর মহাজাগতিক ধ্রুবক
বলা হয়ে থাকে মহাজাগতিক ধ্রুবকের (cosmological constant) জন্ম দেওয়ায় আইনস্টাইন এর জীবনে সবচেয়ে বড়ো ভুল। আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রকাশ করেছিলেন ১৯১৫ সালে। ১৯১৯ সালে সেই তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণ দেন আর্থার এডিংটনের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। আইনস্টাইন তার বহু আগে থেকেই রীতিমতো সুপারস্টার। সুতরাং আইনস্টাইনের একটা কথার মূল্য অনেক।
আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকেই বেরিয়ে এসেছিল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে একসময় মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো ক্রমেই পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসবে। এবং সব গ্যালাক্সি একত্রিত হয়ে বিশাল ঘন একটা বস্তুতে পরিণত হবে। তাছাড়া তার সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বেই রয়েছে স্থানকালের বক্রতার জ্যামিতি। সেই হিসাব থেকেই বেরিয়ে আসে মহাবিশ্বের সংকোচন প্রসারণের ব্যাপারটা। তিনি স্থিতিশীল একটা মহাবিশ্বের কথা কল্পনা করেন সবসময়।
আসলে কোনটা ঠিক?
তখনো এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন হয়নি। তখনো সকলে ধারণা করত মহাবিশ্ব স্থির। এই ধারণা থেকে বের হতে পারেননি আইনস্টাইন। তাই তিনি কৌশলী একটি কাজ করেন। তার সূত্রে একটি ধ্রুবক বসিয়ে দিলেন। তিনি চাইছিলেন সূত্রটাও ঠিক থাকুক, আবার মহাবিশ্বের প্রকৃতিও স্থির থাকুক। ধ্রুবক বসানোর পর সমীকরণের মানে দাঁড়ায়- মহাবিশ্ব স্থির।
কিন্তু পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান খুব দ্রুত বেগে এগিয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং গাণিতিক বিশ্লেষণ বলে, মহাবিশ্ব আসলে প্রসারিতই হচ্ছে। দেখা যায় আইনস্টাইনের সূত্র প্রথমে যে ইঙ্গিত দিয়েছিল সেটিই সঠিক। আইনস্টাইন তার সূত্রকে সঠিক করতে গিয়ে যা করেছেন তা-ই ছিল মূলত ভুল। এর জন্য স্বয়ং তিনিই পরবর্তীতে আক্ষেপ করেছিলেন।

এখন তাহলে মহাজাগতিক ধ্রুবকের কী হবে। আইনস্টাইন বললেন, বাদ দিতে হবে। তিনি তাই করলেন। তার সমীকরণ থেকে ধ্রুবকটা ছেঁটে ফেলে দিলেন। আর বললেন, এটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।
সূত্র:
- Roar Bangla
- কিউরিওসিটি
আরও পড়ুন: যেভাবে আবিষ্কার হলো স্টেথোস্কোপ!