Home » অ্যান্টিবায়োটিক ও সুপারবাগ এর গল্প
সুপারবাগ

অ্যান্টিবায়োটিক ও সুপারবাগ এর গল্প

আগের যুগে যখন যুদ্ধ হতো তখন একবার হেরে গেলেও রাজারা হাল ছাড়তোনা। সৈন্য যোগাড় করে আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিত। আমাদের শরীরকে যদি যুদ্ধের ময়দান ধরি তবে খুব একটা ভুল হবেনা। ৮০ বছর আগে যখন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয় তখন থেকে যুদ্ধ চলছে ব্যাকটেরিয়ার সাথে। এই যুদ্ধে অবশ্যই জয় অ্যান্টিবায়োটিক এরই হয়ে আসছে তবে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়াও হয়েছে আপডেট । তারা অ্যান্টিবায়োটিক এর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে ফেলছে । অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে সব ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছেনা তাদের বলা হচ্ছে সুপারবাগ। সুপারবাগে আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি বছর আক্রান্ত হচ্ছে ২০ লক্ষাধিক মানুষ, যার মধ্যে ২৩ হাজার মৃত্যুবরণ করছে! আমেরিকার মতো একটি উন্নত দেশেই অবস্থা এত ভয়াবহ হলে অন্যান্য দেশের কী অবস্থা, তা ভাবতে গেলেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে। গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প খুঁজে পাওয়া না গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ মারা যাবে সুপারবাগের আক্রমণে। কারণ, খুব সম্ভবত অ্যান্টিবায়োটিক পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে শীঘ্রই।

খুবই হতাশ লাগছে ? এর জন্য দায়ি মূলত আমরাই। অ্যান্টিবায়োটিক এর সঠিক ব্যবহার আমরা করছিনা। খাদ্যে দিচ্ছি অ্যান্টিবায়োটিক। যত্রতত্র শিশুদের উপর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছি। এতে করে আস্তে আস্তে অ্যান্টিবায়োটিক হয়ে যাচ্ছে অকেজো। বাড়ছে সুপারবাগ।

অবশ্য গবেষকরাও বসে নেই। চলছে গবেষণা । তারা অ্যান্টিবায়োটিকশূন্য পৃথিবীতে মানুষের জন্য বিকল্প অস্ত্র আবিষ্কারে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস, ন্যানোপার্টিকেল কিংবা ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করতে পারা বিভিন্ন জীবদেহের অনাক্রম্য ব্যবস্থার দ্বারা উৎপন্ন প্রোটিন। এসব নিয়েই চলছে ভবিষ্যতে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি।

শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্ত্র চাই। যদি অস্ত্র না থাকে, তাহলে যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত। তবে বুদ্ধি করে যদি শত্রুকেও নিরস্ত্র করে দেওয়া যায়, তাহলে? অ্যান্টিবায়োটিক পরবর্তী পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার সাথে এরূপ নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াতেই যুদ্ধ করতে চান চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ। আর এজন্য তারা সাহায্য নিচ্ছেন ন্যানোটেকনোলজির। বিজ্ঞানীরা এক প্রকারের ন্যানো পার্টিকেল নিয়ে গবেষণা করছেন, যেগুলো দেহে প্রয়োগ করলে সেগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের মতো সরাসরি ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করবে না। তবে ব্যাকটেরিয়ার প্রধান অস্ত্রগুলো অকেজো করে দিতে সক্ষম হবে এবং তাতে করে আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে। সুপারবাগ এখন বিজ্ঞানিদের বড় চিন্তা।

ই. কোলি, অ্যানথ্রাক্সের ব্যাকটেরিয়া লিস্টেরিয়া কিংবা সাপ, বিছা বা সামুদ্রিক প্রাণীর বিষ সাধারণত দেহকোষে গর্ত সৃষ্টি করে এবং কোষের কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে পুরো দেহে সমস্যার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে ন্যানো পার্টিকেলগুলো স্পঞ্জের মতো কাজ করবে এবং বিষাক্ত রাসায়নিক শুষে নেবে। ফলে ব্যাকটেরিয়া এর কার্যকারিতা হারাবে অনেকাংশে। বর্তমানে ইঁদুরের দেহে এই ন্যানো পার্টিকেলের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। মানবদেহে সফলভাবে পরীক্ষা চালানো গেলে তবেই এটি বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত হবে। তবে এর কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন, এটি অ্যান্টিবায়োটিকের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল হবে, আক্রান্ত কোষে যথাযথভাবে পৌঁছুবে কিনা, তা নিয়েও থাকছে সন্দেহ।

আরও পড়ুনঃ স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে ?

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

1 thought on “অ্যান্টিবায়োটিক ও সুপারবাগ এর গল্প”

  1. Pingback: সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স-ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স - বিজ্ঞান নিউজ | Biggan News

Comments are closed.